রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৫৯ পূর্বাহ্ন
সুমন খান স্বরূপকাঠি প্রতিনিধিঃ
হাফিজুর ও রাবেয়া পিতৃহারা দুই ভাইবোন মা থাকতে ও এখন অন্যের স্ত্রী। পিরোজপুর নেছারাবাদ স্বরূপকাঠীতে উপজেলার বড়ইবাড়ি গ্রামের বড়ইবাড়ি আলিম মাদ্রাসার পাশেই তাদের পৈত্রিক নিবাস বাবা মৃত হায়দার আলী। রাবেয়া এখন ৮ম শ্রেণীতে পড়াশুনা করছে ঘরের পাশে বড়ইবাড়ি আলিম মাদ্রাসায়ই। ঘর আছে তবে সেই ঘরে দুই ভাইবোনের সাথে ঘরের বড় অংশ দখল করে একটি গরুও থাকে(গোয়াল ঘর)। রাবেয়ার বয়স যখন ৬ মাস তখন পিতা হায়দার আলী ঢাকায় কাজ করা অবস্থা বৈদ্যুতস্পৃষ্ঠ হয়ে নিহত হন। পিতার রেখে যাওয়া কুড়ে ঘরেই রাত্রি যাপন করতেন মা বিলকিস বেগম ও বুদ্ধি প্রতিবন্দি ভাই হাফিজুরকে নিয়ে।
পরে মা বিলকিস বেগম পাশের বাড়ির মোশারফকে বিয়ে এবং মায়ের সহায়তায় ভাই হাফিজুরকে মুরগীর ফার্মে কাজ দিয়ে চলছিল তাদের জিবন। কিন্তু রাবেয়া যখন ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে তখন আর ওই খোলা গোয়াল ঘরে রাত্রি যাপন সম্ভব হয় নি। শুরু হয় তার আত্নিয়-স্বজনদের দারস্থ হওয়া। চাচা-মামা-ফুপু-খালা যে যেমন পারছে সাহায্য করে যাচ্ছে থাকার সুযোগ দিচ্ছে। আর হাফিজুর এখন ১৯বছরে পা রেখেছে ফার্মে কাজ করে বোনের পড়াশুনা, চলাফেরা ও নিজের খরচ চালাচ্ছে। অনেকটা বোকা স্বভাবের, মানুষের সামনে কথা বলতে পারেনা ঠিক করে। ফার্মে কাজ করায় সেখানে রাত্রি যাপনের ঠাই করে নিয়েছে।
কথাগুলো বলছিলেন, হাফিজুর ও রাবেয়ার ৮০ উর্ধ দাদি। হাফিজুরের মা বিলকিস বেগম জানান কি ভাবে গরিবের চাল দুলফা বনে যায়। বিলকিস বলেন, শুনেছি সরকার গরিবদের ঘর দেবেন। ছুটে যাই ৬নং দৈহারী ইউপির চেয়ারম্যান প্রগতী মন্ডলের কাছে। চেয়ারম্যান জানালেন, পাঁচ লক্ষ টাকার ঘর দেবে সেজন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ দিতে হবে। অনেক অনুনয় করে ত্রিশ হাজার টাকায় রাজি করালাম। চেয়ারম্যান তার ভাইকে পাঠিয়ে প্রথমে দশ হাজার টাকা ও জমির কাগজপত্র, জন্মসনদ ও ছবি নিলেন হাফিজুর ও রাবেয়ার পরে নিলেন পাঁচ হাজার টাকা। জানালেন উপজেলার লিস্টে হাফিজুরের নাম এসেছে ওরা ঘর পাবে। পরে একদিন চেয়ারম্যান মোবাইল করে বললেন এক লক্ষ টাকার ঘর এসেছে এজন্য আরও পনের হাজার টাকা দিতে হবে ইউএনও অফিসে। আমি তাতে রাজি হলাম না। ছেলের এত কষ্টের উপার্যন এভাবে যাবে।
এক লক্ষ টাকার ঘর দেবে সরকার সেজন্য ত্রিশ হাজার টাকা কেন দেব? পরে দেখি পাশের বাড়ির কালামকে দেয়া হচ্ছ সেই ঘর। যার ঘরে ফ্রিজ, টিভি দুই লক্ষ টাকা দামের মোটরসাইকেল নিজের দোকান ছেলে আকিজ কম্পাণীতে ঢাকা চাকরি করে। তাই চেয়ারম্যানের বাড়ি বার বার যাই এই এতিমের টাকা ফেরত আনতে কিন্তু চেয়ারম্যান কোন ভাবেই সময় দেয়না, ঘরে থাকলেও অন্যরা বলে ঘরে নাই। এব্যাপারে দৈহারী ইউপির চেয়ারম্যান প্রগতী মন্ডলের সাথে কথা বলার জন্য দৈহারী ইউনিয়ন পরিষদে গেলে তিনি জানান, তার ভাই যদি টাকা নিয়ে থাকে সেটা তার ব্যাপার এখানে আমি কিছু জানিনা। তিনি বিলকিসকে না চেনার ভান করেন, কিন্তু এসময় বিলকিস তার পরিষদে সংবাদকর্মীদের সামনে এসে টাকা চাইলে প্রগতী মন্ডল অনড়গল বলে যান হাফিজুরদের ঘর দেয়ার জন্য তিরি চেস্টা করেছেন, তাদের একটা ঘর অতি প্রয়োজন কিন্তু ইউএনও এবং সহকারি কমিশনার ভুমির কারণে দিতে পারেন নি ইত্যাদি।
বিলকিস বেগম তার দেয়া পনের হাজার টাকা পূনরায় চাইলে সংবাদকর্মীদের সামনেই বিলকিসকে দমকিয়ে ধামকিয়ে উত্তেজিত হয়ে তার চেয়ার থেকে উঠে চলেন চেয়ারম্যান প্রগতী মন্ডল। এব্যাপারে সহকারি কমিশনার(ভূমি) মোঃ কাওসার হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমরা কোন টাকা পয়সা নেইনি, প্রগতী চেয়ারম্যান সম্পর্কে আরও অনেব অভিযোগ রয়েছে। তিনি বিলকিস বেগমকে আইনি সহায়তা নেয়ার পরামার্শ দেন। জানা যায়, বিলকিস বেগম তার নিরাপত্তা ও অর্থ আদায়ের জন্য নেছারাবাদ ও কাউখালী থানা সার্কেল এএসপি কাজী শাহনেওয়াজের স্মরণাপন্য হয়েছেন।
Leave a Reply